নরসিংদীর গ্রামে রোদ উঠলেও শীতের তীব্রতা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। ঠাণ্ডা পানির ভয়কে জয় করে একঝাঁক মাছ শিকারী নেমেছেন বিলে হৈ হুল্লোড় করে। আর এমন দৃশ্য দেখতে মেতে ওঠেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের খলিলাবাদ গ্রামের মানুষ।
সোমবার (৭ মার্চ) খলিলাবাদের বিলে দিনব্যাপী চলে এই পলো বাওয়া উৎসব। বিলের দুই পাড়জুড়ে তা দেখতে ভিড় করেন হাজারো দর্শনার্থী।এবারের পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেন নরসিংদী ও আশপাশের জেলায় প্রায় এক হাজার মাছ শিকারী। পলোতে ধরা পড়ে শোল, বোয়াল, চিতল, নলা, ঘাঘট ইত্যাদি মাছ।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় শত বছরেরও অধিক সময় ধরে প্রতি বছরে একবার করে এই বিলে পলো দিয়ে মাছ ধরা উৎসব হয়। তবে, বিলে মাছের নড়াচড়া ও পানির পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে এই মাছধরা উৎসব বছরে দুইবারও হয়। এই উৎসবের আয়োজন ব্যবস্থাও আকর্ষনীয়। নরসিংদীর বিভিন্ন উপজেলার শখের মাছ শিকারীদের এক একটি দল রয়েছে।
সেই দলের প্রধানরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে একেক সপ্তাহে একেক বিলে মাছ শিকারের ঘোষণা দেয়। সেই ঘোষণা গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ছড়িয়ে দেয় পরিচিতদের কাছে। এভাবেই নির্দিষ্ট দিনে সকাল থেকে বাই সাইকেল, মোটর বাইক, ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত অটো ও মিনি ট্রাক যোগে হাজির হয় নরসিংদীর পলাশ, মনোহরদী, শিবপুর , মনোহরদী, বোলাবো, গাজীপুরের কাপাসিয়া ও কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীসহ আশপাশের অঞ্চলের মাছ শিকারীরা।
আবদুল্লাহ বন্দুকশি নামে ষাটোর্ধ্ব এক মাছ শিকারী বলেন, আমি এসেছি গাজীপুর থেকে। প্রতিবছর এখানে আসি, এবারও এসেছি। মাছ পাওয়া না পাওয়া বিষয় না। সবাই মিলে আনন্দ করছি, হৈ হুল্লোড় করছি এটাই অনেক।
ওসমান গণি নামে একজন বলেন, আমি এসেছি মনোহরদী থেকে। একটা মাঝারি সাইজের শোল মাছ পেয়েছি। আনন্দ লাগছে। দিনব্যাপী চলবে এই পলো বাওয়া উৎসব।
লিটন মিয়া নামে আরেক মাছ শিকারী বলেন, আমি একটা বোয়াল পেয়েছি । এতেই আমি খুশি। লাখ টাকা দিলেও এই মাছ আমি বিক্রি করবো না। এটা শখের জিনিস। আমি বাড়ি নিয়ে যাবো।
মোবারক হোসেন কবির নামে এক এলাকাবাসী জানান, একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই উৎসব চলছে। মাছ কমে গেছে এখন। আগে বেশি মাছ পাওয়া যেতো । তবুও প্রতিবছর দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ এখানে পলো উৎসবে অংশগ্রহণ করে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামে নাইওরী আসে।
বিল্লাল মিয়া এক এলাকাবাসী জানান, আমার বয়স ৪০। এই বিল অনেক বছরের পুরনো। আমি ছোটকাল থেকে এই পলো বাওয়া দেখতেছি। আমার বাপ দাদাও দেখে আসছে। তবে আনুমানিক দেড়শো বছর হবে এই বিলের বয়স।
শফিকুল ইসলাম নামে আয়োজকদের একজন বলেন, প্রতি উপজেলায় আমাদের দল আসে। একেক সময় জেলার বিভিন্ন বিলে পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজনের ভার পড়ে একেক উপজেলার দল প্রধানের ওপর। আমি পলাশ উপজেলার প্রধান। এই বিলের এইবারের আয়োজক আমি। কারও কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়া হয়নি । সবার জন্য উন্মুক্ত এই বিল।
পলাশতলী ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ভূঞা জানান, প্রতিবছরই এই বিলে উৎসবমুখর পরিবেশে পলো বাওয়া উৎসব হয়। এই বিল সকলের জন্য উন্মুক্ত। সবাই এখানে সারাবছরই মাছ ধরতে পারে ।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।